যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বোমাবর্ষণে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুতের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতি জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএর সামনে একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ অনুসন্ধান চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় প্রধান তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র—ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—লক্ষ্যবস্তু হয়। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের গভীরে অবস্থিত ফর্দো স্থাপনাটিতে বাংকার-ধ্বংসকারী বোমা ব্যবহৃত হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, এসব স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই দাবিকে পুরোপুরি মানতে নারাজ।
আইএইএ জানায়, ফর্দোর ভেতরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউজগুলো সম্ভবত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইরানের ৯ টনের মতো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কী হয়েছে—যার মধ্যে ৪০০ কেজির বেশি প্রায় ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ—তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই ইউরেনিয়াম অস্ত্র তৈরির উপযোগী মানের খুব কাছাকাছি ছিল।
অনেকে ধারণা করছেন, হামলার আগেই ইরান এ মজুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এমনও দেখা গেছে, স্যাটেলাইট চিত্রে হামলার আগে ফর্দো কেন্দ্রের বাইরে ট্রাকের সারি দেখা গিয়েছিল, যা ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, ইসরায়েলের প্রথম হামলার দিন (১৩ জুন) ইরান জানিয়েছিল, তারা তাদের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি রক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে ধারণা জোরালো হয়েছে যে ইরান হয়তো সংবেদনশীল উপকরণ সরিয়ে ফেলেছে।
তবে মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে নাকচ করে দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানিরা কিছুই সরাতে পারেনি। এগুলো খুব ভারী ও সরানো কঠিন। তাছাড়া আমরা তাদের আগেভাগে জানাইনি।’
আইএইএর সাবেক প্রধান পরিদর্শক অলি হেইনোনেন বলেছেন, এই অনুসন্ধান জটিল হবে। ধ্বংসস্তূপ থেকে উপাদান উদ্ধার, ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও পরিবেশগত নমুনা সংগ্রহে বহু সময় লেগে যেতে পারে। এমনও হতে পারে, ইউরেনিয়াম ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে।
ইরানের ইউরেনিয়াম মজুত অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তবে সামান্য অংশ হারিয়ে গেলেও সেটি আন্তর্জাতিক মহলের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে আইএইএ ও তেহরানের মধ্যে বিশ্বাস ও সহযোগিতার অভাব অনুসন্ধানকে আরও কঠিন করে তুলবে।
0 Comments